Apache IT

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব 

বাংলাদেশে নিশ্চিত সফলতার জন্য 

বাংলাদেশে সরকারি চাকরি সবসময়ই একটি আকাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার। সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব ? স্থায়ী চাকরি, ভালো বেতন কাঠামো, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা সব মিলিয়ে সরকারি চাকরির প্রতি তরুণদের আকর্ষণ দিন দিন আরও বাড়ছে। কিন্তু আজকের প্রতিযোগিতামূলক যুগে সরকারি চাকরি পাওয়া আগের তুলনায় সহজ নয়। প্রতি বছর লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী বিভিন্ন সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেন, যেখানে নির্বাচিত হন মাত্র কয়েক হাজার।

তাই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, ধারাবাহিক অনুশীলন এবং বাস্তবভিত্তিক প্রস্তুতি। এই আলোচনায় আমরা বিস্তারিত জানবো সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব, কোন বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, কীভাবে রুটিন বানাতে হবে, কোন বই পড়তে হবে, এবং সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কৌশল।

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব

 

১. লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে নির্ধারণ করুন  

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব ? এখানে প্রথম ধাপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরি বলতে কেউ কেউ শুধুমাত্র BCS বুঝলেও বাস্তবে এর পরিধি অনেক বিশাল। যেমন:

  • BCS ক্যাডার চাকরি
  • নন-ক্যাডার সরকারি চাকরি
  • সরকারি ব্যাংক চাকরি
  • প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক নিয়োগ
  • পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস
  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের চাকরি
  • টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল সরকারি পদ

তাই আপনার প্রথমেই ঠিক করতে হবে যে :

  • আপনি কোন ক্ষেত্রে চাকরি করতে চান?
  • আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কোন ধরনের চাকরির জন্য বেশি উপযোগী?
  • আপনি কত সময় দিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারবেন?

যাদের লক্ষ্য পরিষ্কার থাকে, তাদের প্রস্তুতি সবসময় দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় এবং সফলতার সম্ভাবনা বেশি।

 

২. সিলেবাস সংগ্রহ ও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করুন

প্রত্যেক সরকারি চাকরির সিলেবাস আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ:

BCS এর সিলেবাস:

  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
  • ইংরেজি
  • বাংলাদেশ বিষয়াবলী
  • আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
  • গণিত ও যুক্তি
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • কম্পিউটার
  • নৈতিকতা

সরকারি ব্যাংক চাকরির সিলেবাস:

  • বাংলা
  • ইংরেজি
  • গণিত
  • আইকিউ
  • কম্পিউটার

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ এর সিলেবাস:

  • বাংলা
  • ইংরেজি
  • গণিত
  • সাধারণ জ্ঞান

আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী সিলেবাস সংগ্রহ করুন এবং প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্ব বুঝুন। সিলেবাস জানার মাধ্যমেই আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কোন বিষয়গুলোতে বেশি সময় দিতে হবে।

 

৩. একটি শক্তিশালী রুটিন তৈরি করুন 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব এটির উপরে নির্ভর করে সফলতার ৫০% ।যে পরীক্ষার্থী নিয়মিত অধ্যয়ন করে, তার সফলতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। প্রস্তুতির সময় রুটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার দৈনিক রুটিন হতে পারে:

  • ২ ঘন্টা বাংলা
  • ২ ঘন্টা ইংরেজি
  • ৩ ঘন্টা গণিত ও যুক্তি
  • ২ ঘন্টা সাধারণ জ্ঞান
  • ১ ঘন্টা মডেল টেস্ট
  • ১ ঘন্টা রিভিশন

আপনার সময়ের উপর ভিত্তি করে রুটিন সাজিয়ে নিন। রুটিন মেনে পড়লে ৩–৬ মাসেই ভালো প্রস্তুতি তৈরি করা সম্ভব।

 

৪. প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহ করুন 

ভুল বই পড়লে সময় নষ্ট হবে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরির প্রস্তুতির জনপ্রিয় বইগুলো:

বাংলা:

  • বাংলা ব্যাকরণ – Professor’s/MP3
  • বাংলা সাহিত্য – Oracle/Professor’s

ইংরেজি:

  • English for Competitive Exams – Chowdhury & Hossain
  • English Grammar – Wren & Martin (Basic)

গণিত:

  • Razib Sir’s Math Book
  • M. Ali এর গণিত বই

সাধারণ জ্ঞান এবং কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স:

  • কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স (মাসিক)
  • জব সল্যুশন বুক
  • Bangladesh Affairs by MP3

BCS প্রিলি/ব্যাংক প্রস্তুতি বই:

বই বেশি নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি বই নিয়মিত পড়ুন।

 

৫. বাংলা প্রস্তুতি 

বাংলা অংশে সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাংলা অংশ প্রায় সব জায়গাতেই থাকে।বাংলা ব্যাকরণে যেসবে বেশি গুরুত্ব দিবেন:

  • সমাস
  • সন্ধি
  • কারক
  • বিভক্তি
  • বানান
  • বিপরীত শব্দ
  • এক কথায় প্রকাশ

বাংলা সাহিত্য বেশি গুরুত্ব দিবেন:

  • রবীন্দ্রনাথ
  • নজরুল
  • আধুনিক কবি-সাহিত্যিক
  • উপন্যাস ও নাটক

প্রথম ২ মাসেই বাংলা ভালোভাবে শেষ করা যায়, যদি নিয়মিত অনুশীলন করেন।

 

৬. ইংরেজি প্রস্তুতি

যেটা দুর্বল হলে পুরো পরীক্ষাই কঠিন হয়ে যায়। সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব ? আমদের অনেকের কাছে ইংরেজি কঠিন মনে হয়, কিন্তু নিয়মিত চর্চায় এটি সহজ হয়ে যায়।

এর জন্য যেসব অনুশীলন করতে পারেন :

ইংরেজি গ্রামার:

  • Parts of Speech
  • Tense
  • Voice
  • Narration
  • Vocabulary
  • Synonyms-Antonyms
  • Correct Form of Verb

ইংরেজি রিডিং:

  • Passage
  • Cloze Test
  • Error Correction

প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা ইংরেজি অনুশীলন করা উচিত।

 

৭. গণিত ও যুক্তি 

সরকারি চাকরির মূল স্কোর মেকার তাই সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব । গণিত ও যুক্তির দক্ষতা না থাকলে ব্যাংক বা BCS প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো স্কোর সম্ভব নয়।

গণিতে যেগুলো পড়তে হবে:

  • শতকরা
  • লাভ-ক্ষতি
  • গড়
  • অনুপাত
  • সময় ও কাজ
  • ভগ্নাংশ
  • বীজগণিত
  • জ্যামিতি

যুক্তি:

  • সিরিজ
  • কোডিং-ডিকোডিং
  • অ্যানালজি
  • ডায়াগ্রাম (Venn Diagram)
  • ডাটা ইন্টারপ্রিটেশন

প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০টি গণিত সমস্যা সমাধান করলে কয়েক মাসেই উন্নতি হবে।

 

৮. সাধারণ জ্ঞান 

BCS ও নন-ক্যাডারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশ সম্পর্কিত তথ্য সবসময় বেশি গুরুত্ব পায়। সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব বা নিতে আমরা যেগুলো পড়তে পারি।

বাংলাদেশ বিষয়াবলী:

  • মুক্তিযুদ্ধ
  • সংবিধান
  • বাংলাদেশের ইতিহাস
  • প্রশাসনিক কাঠামো
  • অর্থনীতি
  • ভূগোল
  • জাতীয় প্রকল্প

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী:

  • জাতিসংঘ
  • আঞ্চলিক সহযোগিতা সংগঠন (SAARC, BIMSTEC)
  • বিশ্ব অর্থনীতি
  • সাম্প্রতিক ঘটনা

সাধারণ জ্ঞান বেশি পড়লে পরীক্ষায় সময় বাঁচে এবং স্কোর বাড়ে।

 

৯. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব ? প্রস্তুতিতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে ভালো না হলে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অনেক কঠিন হয়ে যায়।

তাই কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে যা পড়তে হবে:

  • বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা
  • আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট
  • অর্থনীতি
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • নতুন আইন বা প্রকল্প
  • জাতীয় পুরস্কার
  • ক্রীড়া

প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

 

১০. মডেল টেস্ট দিন 

বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অপরিহার্য। মডেল টেস্ট না দিলে আপনি কতটা প্রস্তুত, তা বুঝতে পারবেন না।

কেন মডেল টেস্ট দেয়া জরুরি?

  • সময় ব্যবস্থাপনা শেখায়
  • ভুলগুলো ধরতে সাহায্য করে
  • পরীক্ষার ভয় দূর হয়
  • স্কোর উন্নতি হয়

সপ্তাহে কমপক্ষে ২–৩টি মডেল টেস্ট দিলে দ্রুত উন্নতি হবে।

 

১১. নিজের হাতের নোট তৈরি করুন 

পরীক্ষার আগে জীবন বাঁচাবে। তাই ছোট ছোট নোট বানিয়ে রাখুন:

  • গুরুত্বপূর্ণ তারিখ
  • সংস্থা
  • আইন ও ধারা
  • গণিত শর্টকাট
  • ইংরেজি শব্দার্থ

এই নোটগুলো পরীক্ষার শেষ সময়ে অনেক কাজে আসে।

 

১২.  যেসব অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করবেন 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কিভাবে নিব ? স্মার্ট স্টাডি প্লান তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশে এখন সরকারি চাকরি প্রস্তুতির অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। যেমন:

  • YouTube চ্যানেল
  • Facebook গ্রুপ
  • অনলাইন টেস্ট প্ল্যাটফর্ম
  • PDF নোট

অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করলে প্রস্তুতি আধুনিক হয় এবং সময় কম লাগে।

 

১৩. সময় ব্যবস্থাপনা বা গুরুত্ব

যেটা না জানলে যত পড়ুন ততই ব্যর্থ। পরীক্ষায় ১ ঘন্টায় ৮০–২০০ প্রশ্ন করতে হয়। 

তাই:

  • দ্রুত প্রশ্ন সমাধান
  • কঠিন প্রশ্ন বাদ দেওয়া
  • প্রথমে সহজ প্রশ্ন
  • গণিত ও যুক্তিতে টাইম কন্ট্রোল

নিয়মিত সময় ধরে প্রশ্ন সমাধান করলে দক্ষতা বাড়বে।

 

১৪. জীবনযাপন ও মানসিক প্রস্তুতি 

টেনশন কমিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ান।সরকারি চাকরির প্রস্তুতি দীর্ঘমেয়াদি। তাই:

  • পর্যাপ্ত ঘুম
  • নিয়মিত ব্যায়াম
  • মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ
  • নেগেটিভ মানুষ থেকে দূরে থাকুন

মানসিকভাবে শক্ত থাকা খুব জরুরি।

 

১৫. ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন

অনেক পরীক্ষার্থী যেসব ভুল করে:

  • শুধু গাইড বই পড়ে
  • রুটিন না রেখে পড়া
  • অন্যের প্রস্তুতির সাথে নিজের তুলনা
  • শেষ সময়ে চাপ নিয়ে পড়া
  • কমন প্রশ্ন মুখস্থে সময় নষ্ট
  • অনলাইন-অফলাইন দুই দিকেই অতিরিক্ত সময় দেওয়া

এই ভুলগুলো এড়াতে পারলে আপনার প্রস্তুতি হবে দারুণ।

 

১৬. ধারাবাহিকতা রাখুন 

পরিশ্রম হলো সফলতার চাবিকাঠি।সরকারি চাকরির প্রস্তুতি একদিনে হয় না। এটি ৩ মাস থেকে ১.৫ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে। কোনো দিন ২ ঘন্টা, কোনো দিন ১০ ঘন্টা পড়লেও ফল আসবে না প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে ৪–৬ ঘন্টা পড়া সবচেয়ে কার্যকর।

 

১৭. শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি 

কীভাবে দেবেন? 

পরীক্ষার ১-২ সপ্তাহ আগে:

  • নোট রিভিশন
  • পূর্ববর্তী প্রশ্ন সমাধান
  • ছোট ছোট টেস্ট
  • কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স রিভিউ
  • নতুন কিছু শিখতে যাওয়ার দরকার নেই।

 

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি কঠিন নয়, প্রয়োজন শুধু সঠিক পথ ও ধারাবাহিকতা

যদি পরিকল্পনা সঠিক থাকে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পড়া হয়, নিয়মিত মডেল টেস্ট দেওয়া হয় এবং নিজের উপর বিশ্বাস থাকে তাহলে সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব।

আপনি যেখান থেকেই শুরু করেন না কেন,আজ থেকেই শুরু করুন।

হাল ছাড়বেন না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top